Tuesday, August 18, 2009

`অক্ষর' ১০ম সংখ্যায় প্রকাশিত কবিতাগুচ্ছ, ২০০১

সকাল
এক পশলা রোদ্দুর এসে ছিনিয়ে নেয় সকাল
ফলে ঘুম ঘুম চোখে কোনদিন সকাল দেখা হলো না!
প্রতিদিন ভাবি, কাঁচাবাজার থেকে সকাল কিনে আনবো;
কিন্তু হায়! প্রতিদিনই সকালগুলো দূরে আরো দূরে চলে যায়
তাদের বাড়িতে, যারা প্রতিদিন সকাল মাথায় করে পসরা সাজায়।
তাদের ঘরে কেবল ভোর ভোর চোখে মা আর মেয়েটি
সকাল মাথায় তোলে কর্তাটিকে গঞ্জের দিকে এগিয়ে দেয়।
ওই ঘরে খোঁড়া রোদ, বাজার ফেরত রুটিগুলো গিজগিজ করে।

ভৌগলিক
আকাশ ঘুমিয়ে থাকো, আমি থাকি পাহারায়।
পাছে চোখ দুটো ঘুমে টলে তাই ঘুমকে পাঠিয়ে দিই প্রিয় আঙিনায়
আমাদের ছোট ছোট গ্রাম ফেরি করে ঘুমের বাজার,
ঘুমায় নদীর শব, গানের পাখির মুখরিত স্বর;
পাশের বাড়ির কিচিরমিচির করা শিশুগুলো মূর্ছা যায়।
একাকী আকাশ তোমাকে ঘেষেই শুয়ে থাকে রাত,
তারা’রাই সে খবর ভালো জানে।
আকাশ ঘুমাও যদি... আমাদের ভৌগলিক সীমারেখাগুলি-
যারা শুধু বিভক্তির ইশারা পাঠায়- তারা সব ভেসে যাবে রাতের নিরবতায়।
উত্তর আকাশ এখন আমার কণ্ঠে জমে আছে মেঘ,
ঝড়ো হাওয়া আর একরাশ গলাডুবা অন্ধকার-
ও, তুমি ঘুমিয়ে থাকো, আমি আছি পাহারায়।

ছায়াবৃক্ষ ছায়ামানুষ
পৃথিবীর সমান বয়সী যে বৃক্ষটি
দাঁড়িয়ে আছে আমার বিপরীতে-
তাকে আমার জানা হয় না।
এরকম বৃক্ষদিনে প্রকৃতির কথা মনে পড়ে
আর শুধু কান্না পায়,
কেননা সে বৃক্ষটিকে কোনদিন জানা হলো না আমার।
এই যে দীনতা আর অপরাধবোধ
প্রভাবিত করে একদিন বৃক্ষ হয়ে যেতে।

দূরত্ব
গ্রামের কুয়াশা ভেঙে তুমি যাচ্ছো নিরন্তর।
দিগন্তের কাছাকাছি মাঠ পেরিয়ে গেলেই তোমার গ্রামের বাড়ি
তুমি তাই দিগন্তের ভাষা বোঝ, বোঝ মাঠে মাঠে ফসলের উর্বরতা।
বেলাভূমির ঘাসেদের মাড়িয়ে গিয়ে শিখেছি তোমার শীতলতা,
এখন মাইল মাইল দূরের দিকে...
হেঁটে যেতে যেতে তোমার ছবি দেখতে পাই।
তুমি চলে যাবে দূরে আর তাকিয়ে দেখবে-
তোমার গ্রামের মুখ ছুঁয়ে ওঠা ভোরের সে সূর্য;
নদীর বুকে চর জেগে উঠলে,
তুমি চলে যাবে দূরদেশে- বাণিজ্যের ধারণায়।

(...ভাঙনের প্রতিক্রিয়া...)

বৃক্ষ
একদিন বৃক্ষ হয়ে যাবো!
ঠাঁয় দাঁড়িয়েই হবে, সর্বময় বিস্তার আমার।
ডাল-পালা জুড়ে বসে যাবে অতিথি পাখির ঘর-
পাখিদের ঘর হবো, পাতাদের সাথে খেলা হবে বাতাসের;
সুদূরের কথার গুঞ্জন আমাকে ঘিরেই অনুস্মৃত হবে,
মেঘ চাইলে মেঘ, রোদ চাইলে রোদ।
পৃথিবীতে কত কত বৃক্ষমর্ম, বৃক্ষকথা রচিত হয়েছে!
এইসব বৃক্ষকথা, সকল প্রাণির মতো মানুষেরা-
জেনে গেছে; তাই আঙিনায় পদধ্বনি তার।
সকল ক্লান্তির শেষে আমাকেই বলে যাবে
পৃথিবীর যত যত কাহিনী ব্যঞ্জনা।
একদিন বৃক্ষ হয়ে যাবো...
ঠাঁয় দাঁড়িয়েই হবে সর্বময় বিস্তার আমার।

Friday, August 14, 2009

চিরকালীন, প্রেমের কবিতা

চোখ ছিল না চোখে, ফলে...
লেখা হলো জিভের কাহিনী
ঘটি বাটি থালা
নুনে জিভে লালা, চেটো-
পালা তুই পালা, নুনবিশ্বে সাচ্চাকথা...
হলেও হতে পারে
ধরে নিতে পারো; আমার নুনদাতা
চিরমহিয়ান, সর্বদাই নত করে রাখে
মস্তকের দৃঢ়তা।
২০০৫-১৪ আগস্ট ২০০৯, কল্যাণপুর, ঢাকা।

Sunday, July 5, 2009

ছোটগল্প: ৩০ জুন - ০৩ জুলাই ২০০৯, দৈনিক শেয়ার বিজ্ কড়চা, সেগুনবাগিচা, ঢাকা

লেউসা
পাহাড়ি শাক-লতা আর গজারির ডালগুলো আঁটি করে বোঝাটি কেবল কাঁধে নিয়েছে সে, অমনি চোখে পড়লো বনমোরগটি। উফ! একেবারে তেলতেলে। তীব্র শীতলতা আর ইন্ডিয়ান ঝর্ণার বৃষ্টিপতনের মতো ঝিঁঝিঁ শব্দের প্রতিবেশে সন্ধ্যা প্রায় ঘনিয়ে এসেছে। লেউসার পরনে নতুন লুঙ্গি, নতুন জামা পরায় লেউসার মনটা একটু আনন্দেই আছে। অল্পক্ষণের জন্য চিন্তা করে নিলো সে। কিন্তু এক হলো সন্ধ্যা প্রায় হয়ে এসেছে আর হলো জাঙ্গিটাও সাথে আনেনি। কাজেই বনমোরগ শিকারের চঞ্চলতা আজ নিবৃত্তি দিবে কিনা ভাবলো একবার। মনে ভাবলো আবার, না থাক; আজকে না হয় চলেই যাই। কিন্তু দুষ্টুমিটা চাপলো তখনই যখন দেখলো, ময়মনসিংহে জন্মনেয়া ইন্ডিয়ান সেই বিএসএফটিই মোরগটিকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। আর সাথে সাথে একটি ঢিল ছুঁড়ে মোরগটিকে লাপাত্তা করে দিলো। কিন্তু উল্টোদিকে ঘুরে এসে বিএসএফটি তাকে ধরে ফেলতে পারে এটা তার একবারও মনে হলো না। বিএসএফটি দেখে ফেলার পরই কাঁধের বোঝাটি ফেলে দিয়ে পাহাড়ি লতামোড়ার জঙ্গলি পথেই দৌড়ে পালাতে চাইলো। বিদিশামতো দৌড়িয়ে তার ধারণার মতো একটা নিরাপদ জায়গা পেয়ে গেলো বটে কিন্তু জঙলার অন্ধকার আর অস্থিরতায় বাড়ি ফিরবার মূল রাস্তাটি সে হারিয়ে ফেললো। যাক, এরমধ্যে সে খুব গোপনে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দেয়ার জায়গা বয়ড়াতলাটি পেয়ে গেলো, অধিক ডালপালাবিহীন প্রায় মরে যাওয়া বয়ড়া গাছটি নজরে এলো তার। তড়িঘড়ি ভেবে ধিরে ধিরে গাছে উঠে গেলো সে। উঠে ডালে বসে থাকলো কিছুক্ষণ। বিএসএফটির অস্তিত্ব আর কোথাও দেখতে পেলো না। ভয়ে তার শরীর কাঁপছে। লোকটা বোধহয় ভালো আছে কিন্তু বিএসএফ তো তাই ভয় লাগে। সাজু আর দীপকের সঙ্গে আড্ডা দেয় মাঝে মাঝে আবার তড়িঘড়ি করে চলেও যায়। সাজু বলেছিলো, চলে যাবার সময় বিএসএফটির চোখ যেন কেমন ছলছল করতে থাকে জলে; চেংড়াপেংড়া ওদের বিষয়টি কোনভাবেই ঠাহরে আসে না। তার কষ্ট হয়; কেননা, লোকটি আর কোনদিন বাংলাদেশে ফিরে আসতে পারবে না।
সাজু এসে ডাক দেয়, কি রে লেউসা, তুই এখনো গাছে উঠে আছিস কেনো? তোর খড়ির বোঝা কোথায়? বাড়ি যাবি না?
লেউসা বলে, যাবো, আস্তে কথা বল ময়মনসিংহের বিএসএফটি বোধহয় আশেপাশেই কোথাও আছে। শালা বেটা আজকেও একটি বনমোরগ তাড়িয়ে এদিকে এসেছে।
সাজু বলে, বিএসএফ তো চলে গেছে।
-কখন গেলো, লেউসা প্রশ্ন করে?
-সাজু জানায়, একটু আগেই; কয়েকটি চালতা নিয়ে চলে গেছে। আমিই পেড়ে দিয়ে এলাম।
লেউসা একটু সস্তির নিঃশ্বাস ফেলে যাক বাবা বেঁচে গেলাম।
খড়ির বোঝা আর পাহাড় থেকে নেমে আসা গরুগুলির সাথে বাড়ি ফিরবার পথে সাজু লেউসাকে জিজ্ঞেশ করে, তুই বিএসএফটিকে এতো ভয় করিস কেনো? ওর সাথে তো আমাদের খাতির আছে। গল্পগুজব করে, ময়মনসিংহের আত্মীয়স্বজনের কথা বলে কাঁদে।
-লোকটা মনে হয় ভালো আছে কিন্তু তবুও ভয় হয় শালা বিএসএফ তো, দেখলি না সেদিন আন্দ্রে চিসিম কে বিএসএফরা কিভাবে গুলি করে মেরে ফেললো। পাহাড়ে ওর মরা দেহটি কেমন যেনো বারুদপোড়া গন্ধ হয়ে গিয়েছিলো।
-ওরা তো বড় বড় সেগুনগাছ কেটে ফেলে, একরাতে যদি সুযোগমতো গাছ কাটতে পারে তাহলে এরকম ২০/৩০টির মতো গাছ কেটে নিয়ে আসতে পারে, সাজু বলে। ওরা তো চোর সেজন্যই ওদের গুলি করে।
লেউসা বুঝে ওরা চুরি করে পাহাড় থেকে কাঠ কেটে নিয়ে চোরাই বাজারেই বিক্রি করে দেয়। কিন্তু ওরা তো গরিব; ছেলে-বউ-সন্তানাদি নিয়ে বেঁচে থাকার অন্বেষায় চুরি করে কাঠ কাটাকেই জীবিকা হিসেবে নেয়। ওদের তো কিছু করার নেই। যারা চোরাই বাজার তৈরি করে এইসব কাঠ কিনে নেয় তাদেরই তো শাস্তি হওয়া উচিত। ভাবতে ভাবতে অর্চি মিরংয়ের কথা মনে পড়ে তার। অর্চির পরিবারও পাহাড়ে কাঠ কাটে। তবে ভারি কাঠ নয়। রান্নাবান্নার জন্য প্রয়োজনীয় যে কাঠ ব্যবহার হয় সেই কাঠ কাটে। অর্চিও পাহাড়ে কাঠ কাটে, মাঝে মাঝে স্কুল থেকে ফিরে বিকেলবেলা পাহাড়ে কাঠ কাটতে যায়। অর্চিও তো একদিন এরকম গুলি খেয়ে মরে যেতে পারে। লেউসা অর্চিকে ভালোবাসে আর অর্চিও লেউসাকে ভালোবাসে -অর্চি বলে, তবে ওইরকম ভালোবাসে না, সে তার নিজের মধ্যেই আত্মমগ্ন থাকে বেশি। স্কুলে যখন অর্চি বন্ধুদের নিয়ে মগ্ন থাকে বেশি তখন লেউসার কষ্ট হয়। অর্চি যেদিন তার পকেট থেকে পাইলট কলমটা নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলো জঙ্গলে... সেই রাগ থেকেই পলির হাতের এক থাপ্পর খেয়েছিলো আবার বাড়ি ফিরেও বাবার হাতে বেতের বাড়ি। তবু অর্চিকে সে ভালোবাসে কারণ তার ফুফাকে অর্চি একদিন প্রণাম করেছে। আর অর্চিই তাকে শিখিয়েছে ওদের ভাষায় নাঙ-আঙ মানে তুমি-আমি। আঙা নাঙ্খো নামিনিকা মানে আমি তোমাকে ভালোবাসি। পলির ওই ব্যবহারে আজও ওর শরীরে জ্বালা হয়, ব্যাপারটা সাজু জানে। ওই রাগ থেকেই সুসান রংদির সাথে লেউসা-সাজুদের ঝগড়ার সূত্রপাত। একদিন তো নই খেলার ছলে ঝিক দিয়ে সুসানের মাথাই ফাটিয়ে দিয়েছিলো। সেকি রক্তপাত!
-লেউসা সাজুকে জিজ্ঞেস করে, অর্চিকে আজ দেখেছিস রে?
-সাজু বলে, নাহ! আজকে মনে হয় অর্চি কাঠ কাটতে আসেনি। ইদানিং বিএসএফদের পাহাড়া খুব বেড়ে গেছে। মনে হয় সেজন্যই হোগলির মহিলারাদের কাঠকাটা কমে গেছে।
মুহূর্তেই মনে পড়ে লেউসার, আজকে ওদের গরুগুলির একটিও পাহাড় থেকে ফিরে আসেনি। সে সাজুকে বললো, সাজু? আজকে তো গরুগুলি একটিও ফিরে আসেনি রে। বিকেল থেকেই দেখেছিলাম একদম ঝিঝাঙের মাঝামাঝি ধারি তাজা ঘাসে খাবারে ব্যস্ত সব গরু। ইস! বিএসএফরা আবার ধরেও নিয়ে যেতে পারে রে। এরকম হলে বিডিআর-বিএসএফ হোয়াইট ফ্লাগ মিটিং ছাড়া গরু উদ্ধার কোনভাবেই সম্ভব নয়। সত্যিই হলো তাই, ওরা সুখেন ছড়ার কাছাকাছি যেতেই নেমতের সাথে দেখা সে বললো, আমাদের গরুগুলিকে বিএসএফদের ধরে নিয়ে যেতে দেখেছে সে। নেমতের কথা অবশ্য কেউ বিশ্বাস করে না। ওই শালা বেটা একদিন ওর গোয়ালের বাছুরের সঙ্গে সেক্স করেছে, বলে কিনা! ওই বাছুরটা তার বউ তাই সে ওর সাথে সহবাস করেছে। কিন্তু তবুও চেয়ারম্যান ওকে পাগল বলে জুতা দিয়ে পিটিয়েছে।
-লেউসা সাজুকে বলে চল তো, ঝিঝাঙের আশপাশটা ঘুরে দেখে আসি গরুগুলি এখনো ওখানে আছে কিনা। বিএসএফরা গরু যখন ধরে নিয়ে যায় তখন গেরস্থের বিপদ বাড়ে। মানুষে মানুষে থানা হাজতের যে ঝামেলা, গরুর জন্যে ক্যাম্প-বিডিআর মিলে গেরস্তের সেই বিড়ম্বনা হয়। কোন কোন সময় এমন হয় যে, গরুর জন্য গেরস্তের এক সিজনের ফসলই ঘরে উঠে না। এই যন্ত্রণা লেউসার ভালো লাগে না। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো, প্রায়ান্ধকারেই ওরা ইন্ডিয়ান পাহাড় ঝিঝাঙের দিকে গেলো। কিন্তু ইন্ডিয়ান পাহাড়ের গভীর অরণ্য থেকে গরুগুলি কোনভাবেই উদ্ধার করতে পারলো না।

একদিন, দুইদিন, তিনদিন এভাবে এক সপ্তাহ চলে গেলো তবু ওদের গরুগুলি আর উদ্ধার করতে পারল না। বিডিআর হোয়াইট ফ্ল্যাগ মিটিঙের আহ্বান করলেও বিএসএফরা তাতে রাজি হলো না। লেউসাসহ ওদের পরিবারও একটি বিপত্তির মধ্যে পড়লো। এরমধ্যে ওদের এলাকায় একটি মজার কাণ্ড ঘটলো। উঁচু উঁচু ওই পাহাড়ি ঢালপথে ইন্ডিয়ান বিএসএফরা যেসব তেজি ঘোড়া নিয়ে চলাফেরা করে সেইসব ঘোড়াগুলির মধ্য থেকে
MQN 146 তেজি একটি ঘোড়া সীমান্তরেখার এলাকা পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। রাখাল সমিতির প্রেসিডেন্ট সিদ্দিক আহমদের সেকি উল্লাস! ভারত সরকারের ঘোড়া উদ্ধারের জন্য এবার আমাদের গরুগুলি নিশ্চয়ই বিএসএফরা ফিরিয়ে দেবে। বিডিআরদের হোয়াইট ফ্ল্যাগ মিটিং আহ্বানের পর এবার বিএসএফরাই মিটিং আহ্বান করলো। বাংলাদেশি বিডিআর তাতে সম্মতিও দিলো। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তরেখা চিহ্নিত জায়গাটির কাছাকাছি ছোট একটি পাহাড়ে যেখানে ফ্ল্যাগ মিটিং হয় সেখানেই মিটিঙের সিদ্ধান্ত হলো। এরকম মিটিং হলে বাংলাদেশ থেকে বিডিআর সদস্যসহ এলাকার কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তিও উপস্থিত থাকেন। লেউসার ফুফাও ওই মিটিঙের একজন হিসেবে থাকেন। কিন্তু এবার কি পরিস্থিতিতে এইসব গণ্যমান্যরা আশেপাশে থাকলেও সরাসরি মিটিঙে থাকতে পারবেন না। পরিস্থিতি খুবই গরম। এমনই গরম যে বিডিআর সদস্যদের পরিস্থিতি হলো স্টেপ টু ফায়ার। মিটিঙের আগের দিন থেকেই বিডিআর সদস্যদের আনাগোনা বেড়ে গেলো। ফ্ল্যাগ মিটিং পাহাড়ের আশেপাশে বাংলাদেশি পাহাড়গুলোয় মেশিনগান, বাঙ্কারগুলো সচল করা হলো। যথারীতি মিটিং বসলো। হোয়াইট ফ্ল্যাগ নিয়ে বিডিআর-বিএসএফ সদস্যদের আগমন দৃশ্যটি সবাই দেখলো দূরে দাঁড়িয়ে। ধিরে ধিরে মিটিঙে কথাবলা, তর্কাতর্কি, ইংরেজি-বাংলা-হিন্দি ভাষায় তৈরি হলো উত্তপ্ত একটি মুভমেন্ট। লেউসার খুব ভীতি হলো এবার বোধহয় নিশ্চিত বিডিআর-বিএসএফ যুদ্ধটা লেগেই যাবে। বিডিআর সদস্যদের আড্ডা থেকে ওদের কথাবার্তাও শুনেছে সে বিভিন্ন সময়। ওরা বিএসএফদের সাথে যুদ্ধ করতে চায়। সীমান্ত এলাকার এইসব অতন্দ্র প্রহরী প্রচণ্ড ক্ষেপে আছে বিএসএফদের উপর। অবশ্য বিডিআর-বিএসএফ যুদ্ধের কি কারণ থাকতে পারে, লেউসা তার বিস্তৃত জানে না। সত্যি সত্যি যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে তো ওদের গরুগুলি আর ফিরে পাবে না। হঠাৎ কী এক আচমকা শব্দে একটা বোমা ফাটলো। টিলার আশপাশটা ধোঁয়ার আচ্ছন্নতায় মিটিং ছেড়ে বিডিআর-বিএসএফ সদস্যরা বেশকিছু গুলির বিকট শব্দ করতে করতে দ্রুত ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলো। খুব দ্রুত হুড়োহুড়ি করে ওই এলাকার লোকজনও মিটিংপাহাড়ের আশপাশ থেকে সরে গেলো।

নানাবিধ যন্ত্রণায় বিদ্ধ হতে থাকলো লেউসা। এরমধ্যে অর্চিরও বিয়ে হয়ে যাবে। বর পছন্দ করতে সে পুটিমারি চলে গেলো। বর যদি পছন্দ হয় তাহলে ওখানে সপ্তাহখানেক থেকে বরসহ সে বাড়িতে চলে আসবে। খবরটা শোনার পর লেউসার মাথাটা খারাপ হতে থাকলো। অবশ্য কানাঘুষাটি সে আগেই শুনেছিলো, অর্চিও বলেছে একদিন; খুব শিগগির তাকে বিয়ে করতে হবে। বন্ধুবাৎসল্ল্যবিহীন এই পৃথিবীটা মানুষের থেকে ক্রমশ ধূসর-বিমুখ। লেউসার একাকিত্ব ক্রমাগত তাকেই পীড়িত করলো। ওদের বাড়ি থেকে পুটিমারি অনেক দূরের পথ। লেউসার মনে হলো, এখনি তার পুটিমারি যাওয়া উচিত। গিয়ে অর্চিকে জিজ্ঞেশ করা উচিত বিয়ে করবে যদি তাহলে আমাকে ভালোবেসেছিলে কেনো? মন খারাপ আর অস্থিরতায় সে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারলো না। মনে ভাবলো, মেয়ে মানুষ বোধহয় প্রতারক চরিত্রনিয়তিতেই প্রবৃত্ত হয় লেউসার মতোদের জন্যে।
সপ্তাহখানেক পর অর্চি বর নিয়ে বাড়ি ফিরে এলো। সবাই বর দেখলো। সুদর্শন। ডেভিড ওয়াশিংটন লোকটা ভালো আছে। সবাই বললো, অর্চির সঙ্গে মানিয়েছেও ভালো। খুব ভালো বেডমিন্টন খেলায়। কিন্তু লোকটাকে দেখার পর লেউসার খুব রাগ হলো। কোথায় অর্চির পাশে থাকবে সে তা না ওয়াশিংটন! লেউসার মনটা সত্যি খারাপ হয়ে গেলো। টপটেন সিগারেটের প্যাকেট আর বাঁশিটা কোমরে গুঁজে; জুয়েল ফ্লাওয়ার রেডিওটা হাতে নিয়ে পাহাড়ের দিকে যেতে শুরু করলো, সাজুকে খুঁজে বের করে আজকে ‘সহধর্মিনী’ ছবির কাহিনীটা শোনাবে সে। মা শবনম, বাবা রাজ্জাক আর ছেলে, নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের দুর্দান্ত অভিনয়ের ছবি।

দীর্ঘদিন পর লেউসার মন আবারো খারাপ হলো। চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলো আর রেডিওতে বিবিসির খবর শুনছিলো সবাই। পিথিশ হাজং এসে পরিবেশটাই বিগড়ে দিলো। অহিত মোড়ল পিথিশকে নিজহাতে চা বানিয়ে খেতে বললেই সে এই কাজটা করে। চা বানানোর আগে দুধের পট থেকে কিছুটা দুধ আগে হাতে ঢেলে খেয়ে নেয়। এ জন্যই অহিত মোড়ল পিথিশকে একটা কড়া গালি দিলো।
-জাউরা হাজং! দেশে গজব পড়ছে আর তুই কিনা দুধ খাওয়ায় অন্ধ হয়ে গেলি।
-পিথিশ জিজ্ঞেশ করে, কি হয়েছে মোড়ল?
-দেখছিস না সবাই বিবিসির খবর শুনছি, সান্দাখালির অজয়নাথের ছেলেবউকে গতরাতে বিএসএফরা র‌্যাপ করেছে। পাঁচ-ছয়জন ছিলো। যাবার সময় অজয়নাথ আর তার ছেলেসহ এলাকাবাসী ওদের আটকে ফেলেছে। তিনজন একেবারে মার্ডার, দুজন আহতাবস্থায় পালিয়েছে। একজনকে অজয়নাথের ছেলে কাঠকাটার দা দিয়ে পায়ের টোতে কোপ মেরে একেবারে দুভাগ করে বিডিআর সদস্যদের হাতে ধরিয়ে দিয়েছে। সান্দাখালি বিডিআর ক্যাম্পসহ এলাকাটা বিডিআর-পুলিশের আনাগোনা আর যুদ্ধের ভয়ে থমথম হয়ে আছে। এবার শুধুমাত্র বিডিআর-বিএসএফই নয়, স্বাধিনতার জন্য বাংলাদেশের যে যুদ্ধ করতে হয়েছিলো পাকিস্তানের সংগে সেই যুদ্ধই এখন লেগে যাবে ভারতের সংগে।
-পিথিশ বলে, ই জিনিশটাই আমার ভালো লাগে না মোড়ল। বিডিআর বিএসএফ মিলে ঝগড়া তাই আমরা কি করেছি। আমাদের উপর শুধু গজব পড়বে, ই জিনিশটাই আমার ভালো লাগে না। বলতে বলতে সে নিজের চা নিজেই বানিয়ে খেলো।
সীমান্ত এলাকায় এই ঘটনা প্রায় নিতিদিনের। লেউসা ভাবলো একবার সান্দাখালি যাবে আজ। থমথমে পরিবেশটা দেখে আসবে। কিন্তু বাড়িতে নিজের কাজের ঝামেলা আর লোকজনের ভয়ভীতিতে তার যাওয়া হলো না। গেলো না সে গোলাগুলির ফাঁকে পড়ে মরার ভয়েও। কে জানে যুদ্ধের তো কোন ঠিক-ঠিকানা নেই।

সুদিপ মিরং দীর্ঘদিন পর বাড়ি এসেছে। আর্মিম্যান। যশোরে পোস্টিং। ওদের বাড়ির সবাই মোটামুটি আনন্দে আছে। অর্চির ভাবি লেউসাকে খবর পাঠালো আজকে ওদের বাড়িতে একবার যেতে। লেউসার প্রিয় পাকা চাউলা কাঠাল খেতে। অর্চিদের বাড়িতে যেতে লেউসার আর ভালো লাগে না। অর্চির বিয়ের পর থেকেই ওদের দিকে লেউসার মনটা মরে গেছে। তবু মাঝে মাঝে যায়। অর্চির ভাবির সাথে মজাটজা করে আসে। এরমধ্যে অর্চি সন্তান সম্ভবা হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই হয়ত সন্তানের মা হবে। আবার এরমধ্যে সন্তানের মা হয়েও গেলো কিনা উদাসিনতায় লেউসার আর প্রবৃত্তি বাড়ে না। অর্চিদের বাড়িটাই যেন দিনে দিনে ওর কাছে অনাত্মীয়ের হয়ে গেছে। অথচ এই বাড়িটাকেই তার নিজের বাড়ি মনে হতো। ওদের বাড়ির পেয়ারা গাছ, জাম্বুরা, আনারস আর কাঁঠালের গাছগুলি যেন এখন স্মৃতি ভারাতুর। স্মৃতি ভারাতুর হয়ে আছে স্কুলে প্রায় প্রতিদিনই অর্চির জন্যে তার অপেক্ষা করা।
সান্দাখালি যাওয়া হয়নি তাই মনে ভাবে ঠিক আছে অর্চিদের বাড়িতেই যাই একবার। সুদিপদা-ভাবির সংগে গল্পগুজব করে আসি কিছুক্ষণ। অর্চি ছেলের মা হয়েছে। বাড়িতে আনন্দের ছড়াছড়ি। আত্মীয়তে বাড়িটা গমগম করছে। লেউসা সুদীপ মিরং, তার বউ আর ওদের বান্ধবী মৃদুলা দারিঙের সঙ্গে আড্ডায় মগ্ন হয়ে গেলো। প্রথমেই তার অর্চিকে দেখতে যাওয়া উচিত ছিলো কিন্তু সে যায়নি। মনে জেদ হয়েছে, তার এই না যাওয়াটাও যেন এক ধরনের প্রেমের প্রতিযোগিতা। খানিক পর অর্চি তার ছেলেকে কোলে নিয়ে সামনে এলো। লেউসা দেখলো অর্চির শরীরটা শাদামতো ফ্যাকাসে প্রচ্ছন্ন হয়ে আছে। স্বতোস্ফূর্ত অর্চি তার নবজাতক শিশুটিকে লেউসার কোলে দিলো। ভীষণ ফুটফুটে শিশু! একেবারে স্বর্গীয় শিশুদের মতো। যে রকম শিশু দেখলে খুব আদর করতে ইচ্ছে করে।
-লেউসা অর্চিকে জিজ্ঞেশ করলো, জামাই বাবুকে কোথাও দেখছি না যে।
-অর্চি বললো, ও পুটিমারিতে, বাড়িতে জরুরি একটা কাজে গেছে। আজকেই চলে আসবে।
শিশুটিকে কোলে নিয়ে লেউসার মনটাও কি যেন আনন্দে শিশুর মতো হয়ে গেলো। তার মনে চঞ্চলতা খেলা করলো। হঠাৎ কি যেন শিশুটির সঙ্গে কথায় মগ্ন হবার প্রবৃত্তি হলো তার। আদরের ফাঁকে শিশুটিকে তুলতুলে প্রশ্ন করলো, কি রে বেটা? ওয়াশিংটনের জারজ। ভালো আছিস?
মুহূর্তেই মনে হলো, এটা সে কি বলেছে! তার সঞ্চারণে আচমকা একটা ধাক্কায় সে অর্চির দিকে তাকালো। অর্চি টেলিভিশনের দিকে তাকিয়ে আছে। অর্চির ভাবি বিছানা থেকে উঠে শোকেস থেকে একটা গ্লাস আর সুই নিলো। তারপর সোফায় লেউসার মুখোমুখি বসে থাকা অর্চির বুকের শাড়ি ফেলে ব্লাউজের বোতামগুলো খুলে ফেললো। লেউসা দেখছে অর্চির ভরাট খোলা দুধে ধরে ওর ভাবি সুই দিয়ে স্তনের বোটা ফুটো করে তার বুক থেকে টিপে টিপে দুধ বের করে আনছে। শালদুধ। লেউসা অবাক হয়ে দেখছে ঘটনাটা। সে একেবারে থ হয়ে গেলো যখন সেই দুধ সন্তানকে খেতে না দিয়ে অর্চি নিজেই খেয়ে ফেললো। ঘটনাটি অবশ্য তার কিছুতেই বোঝার নয়। তার মনে হলো হায় হায় অর্চি এটা কি করলো, সে নিজেই নিজের বিষ খেলো না তো! নিজের দুধ নিজের খেতে হয় বিষয়টি লেউসার জানা নেই। তার মনে পড়লো নিজেরই যন্ত্রণায় একবার সে বিষের বোতল নিয়ে পাহাড়ে উঠে গিয়েছিলো আত্মহত্যা করবে বলে। কথাটি সে অর্চিকে বলেছিল একদিন। অর্চি কি তাহলে সন্তান জন্মের পর নিজের দুধ খেয়েই নিজের মধ্যে আত্মহত্যা করলো? বিষয়টি বুঝতে পারে না লেউসা। মাথা নিচু করে নিরবে বসে থাকলো কিছুক্ষণ। বিদ্যুতশকের মতো বৃহৎ একটা ঝাকি খেলে সে। ছেলেকে অর্চির কোলে ফিরিয়ে দিয়ে নিরবে ওদের বাড়ি থেকে বের হয়ে এলো। নিজের মধ্যে সে অস্থিরতা অনুভব করলো। এমন আর লাগেনি কখনো।
বাড়ি ফিরবার পথে দীপকদের বাড়িতে ধারিকা কাকির বিকট চিৎকারে কান্নার গলা শোনে থমকে দাঁড়ায়। আজ কি হলো ধারিকা কাকির? কেউ মরে গেলো না তো! বিদেশ কাকার বয়স হয়েছে অনেক সেই কি মরে গেলো কিনা! নাকি ওদের কাউকে সাপে কামড়েছে অথবা বাঘে খেয়েছে! বিষয়টি দেখার জন্য সে দীপকদের বাড়ির দিকে যায়। বিডিআর আর লোকজনেভর্তি বাড়িটা। লেউসার বুকটা ধক করে কেঁপে উঠলো ধারিকা কাকির আহাজারির দৃশ্য দেখে।
-কি হয়েছে? সে জিজ্ঞেশ করলো।
লোকজন বলাবলি করছে, লাশটা বোধহয় আর ফিরে পাওয়া যাবে না। লেউসা বুঝতে পারে না কার লাশ? কোথায় পড়ে আছে?
-সে আবার একজনকে জিজ্ঞেশ করে কি হয়েছে? কিসের লাশ?
একজন জবাব দেয় বিদেশ বাবুর ছেলে দীপককে বিএসএফরা গুলি করে মেরে ফেলেছে।
-বলেন কি, কেনো? বিএসএফরা কেনো দীপককে গুলি করলো? ওর তো অনেক বিএসএফের সাথে খাতির ছিলো।
দীপক অস্ত্রপাচার করতে গিয়ে বিএসএফদের হাতে গুলি খেয়েছে।
দীপক অস্ত্রপাচারের সংগে জড়িত ছিলো বিষয়টি লেউসা তার নিজের মধ্যে বিশ্বাস করতে পারে না। তার শুধু মনে পড়লো কত বিএসএফ-বিডিআর ওদের বাড়িতে নিরবে বসে মদ খেয়েছে, খাতির করেছে। বিএসএফদের কি কোন ধর্মই নেই? ওরা দীপককে গুলি করলো! নিজের অস্থিরতাকে সে আর দমিয়ে রাখতে পারছে না। মাথাটা পাহাড়ের মতো ঝিম মেরে একেবারে স্তব্ধ হয়ে গেলো প্রায়।
আনমনেই লেউসা বাড়ি না ফিরে সোজা পাহাড়ের দিকে গেলো। কিছুই ভালো লাগছে না তার। পাহাড়ের শীতল মাটিতে স্তব্ধ হেলান দিয়ে ভাবছে সে, মাহিন সাংমার দেখা পেলে ইন্ডিয়ান লতা দিয়ে পেচানো বাঁশিতে বানিয়ে সাধুর দরগায় বসে আজ গাঁজা খাবে। সাধুর কথা মনে পড়লো তার, গাঁজা খেয়ে মানুষ আত্মদমন আর পীড়ন থেকে নিবৃত্তি নেয় আল্লাকে একান্তভাবে সাধনায় পাবার জন্য। নিজের ভেতরের আয়নায় নিজেকেই পরিষ্কার দেখা যায়। কিন্তু বয়ড়াতলায় গিয়ে লেউসা যা দেখলো তা তাজ্জব-অবাক হওয়ার মতোই বিষয়। ফিসফাস আর মৃদু গোঙানিতে অপ্রকৃতিস্থ সাজু আর ময়মনসিংহে জন্মনেয়া সেই ইন্ডিয়ান বিএসএফটিকে দেখতে পেলো লেউসা। অদূরে, ঝিঝাঙের ঝাপসা ঢালুপথেই সে দেখলো MQN 146 ঘোড়াটি, পাহাড়ে মেঘের রেখা ধরে ধরে ঘাস খাচ্ছে। আজ এই দিনে লেউসার কি হলো সে নিজেই ভেবে পেলো না। মুহূর্তেই মাথাটা ধরে আসলো। সবকিছুই অসার, অপ্রকৃতি আর তার মিথ্যে ধারণার মনে হলো। সে বসে পড়লো মাটিতে। চোখের অপ্রকৃতিস্থ গতিময়তা টের পেলো। লতাপাতায় মোড়ানো পাশের একটি গর্ত থেকে বিষাক্ত একটি সাপ বেরিয়ে এলো, ধিরে ধিরে জঙ্গলের দিকে হারিয়ে গেলো। শরীর ঘেমে আসলো লেউসার। সে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেলো।

Saturday, July 4, 2009

কবিতা ১৩.০৬.০৯

বর্ষাদিনে, শ্যামধর্মে কাঁপা

ব্রত পরিখার নিচে বসবাস, বর্ষাদিনে, তুমুল অন্ধকারে-
মেঘমেদুরতা, আর ভূকম্পনে ভীষণ শীতল তোমার পা
ঊর্ধ্বাকাশে, উপরে উঠে না।

ব্রতাচার, এ খেলা জটিল
আমি বলি লীলালাস্য, শ্যামঘন দেয়া নামে রাতে
বৃষ্টিস্নাত ভেজামন, লজ্জিত সন্ত্রাসী হিতে শুভস্য শুভম...
নারদের ভয়ে কাঁপে হীন সমতল
ভাসছে জলের মফস্বল; দূরে, হিতের ঘনত্বে-
শত জনমের ভয়ে সেও দেখি অযথা টলে না।

ভিখ মাঙি! শ্যামধর্মে তোমারও তো দ্বৈপায়ন সবুজ শ্যামল...
ছয়ফিট উচ্চতায় রক্তচোখ, ঘন টলমান
বর্ষাদিনে, ফুলে-ফসলের দাহে অহেতু নারদ, বলি তুমি শুধু তুমি
আহা রে দহন! শিষ্টাচারে নত, শ্যামধর্মে কাঁপা।